SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK

আল-আসমাউল হুসনা শব্দ দ্বয়ের অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহকে একত্রে আসমাউল হুসনা বলা হয় । আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালার এরূপ বহু গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে । হাদিস শরিফে আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নামের কথা বলা হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম অসংখ্য। তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত হলো ৯৯টি নাম । যেমন- আলিম, খাবির, রায্যাক, গাফ্ফার, রাহীম, রাহমান ইত্যাদি ।
 

গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আল-আসমাউল হুসনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ নামগুলো তাঁর পরিচয় ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটায় । এ নামগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার গুণ ও বৈশিষ্ট্য জানতে পারি । ফলে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন করতে সহজ হয় ।

এ নামগুলোর দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ডাকতে পারি । এসব নামে ডাকলে তিনি খুশি হন । এসব নাম ধরে আমরা মোনাজাত করতে পারি । তিনি স্বয়ং বলেছেন-

অর্থ : “আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে সকল নাম দ্বারাই ডাকো । যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো । অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হবে।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ১৮০)

আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহ আমাদের উত্তম চরিত্রবান হতে অনুপ্রাণিত করে । আল্লাহ তায়ালার এসব গুণ অর্জনের জন্য মানুষ তার জীবনে চর্চা করলে সে সচ্চরিত্রবান হয় । সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয় । আল কুরআনে বলা হয়েছে-

অর্থ : (আমরা গ্রহণ করলাম) “আল্লাহর রং, আর রঙে আল্লাহ অপেক্ষা আর কে অধিকতর সুন্দর?” (সূরা আল- বাকারা, আয়াত ১৩৮)

আল্লাহর রং হলো আল্লাহর দীন ও তাঁর গুণাবলি । আর সর্বোত্তম গুণাবলিতো আল্লাহরই । সুতরাং আল্লাহর গুণাবলির অনুসরণ করলে উত্তম চরিত্রবান হওয়া সম্ভব। নিম্নেবর্ণিত আলোচনায় আমরা আল্লাহ তায়ালার কতিপয় গুণের সাথে পরিচিত হব।

 

আল্লাহু গাফ্ফারুন 

গাফ্ফার শব্দের অর্থ অতি ক্ষমাশীল । আল্লাহ্ গাফ্ফারুন অর্থ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল । আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা অপরিসীম । তিনি সবচেয়ে বড় ক্ষমাশীল । তিনি বলেন-

অর্থ : “এবং আমি অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তাওবা করে, ইমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।” (সূরা তা-হা, আয়াত ৮২)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি আমাদের বহু নিয়ামত দান করেছেন । কিন্তু অনেক মানুষই অহংকার ও মূর্খতাবশত আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যায় । তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে শাস্তি দেন না, বরং সুযোগ দেন। বান্দা যদি তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে তবে তিনি মাফ করে দেন । বড় বড় পাপীও যদি তাওবা করে তাহলেও তিনি ক্ষমা করেন । তাঁর ক্ষমা তুলনাবিহীন । আমরা জানা-অজানায় অনেক গুনাহ করে ফেলি । তাই সবসময় আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইব তিনি অতি ক্ষমাশীল । তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন ।

 

আল্লাহু সামাদুন

সামাদুন শব্দের অর্থ অমুখাপেক্ষী । আল্লাহু সামাদুন অর্থ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তায়ালা কারো মুখাপেক্ষী নন । তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ । আল কুরআনে তিনি নিজেই বলেছেন-“আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।” (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত ০২)

আল্লাহ তায়ালা খালিক বা সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক বা সৃষ্টি । সকল সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী। জন্ম-মৃত্যু, বেড়ে ওঠা সবকিছুর জন্য সকল সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার কুদরতের মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি সকল প্রয়োজন ও চাহিদার উর্ধ্বে । সব প্রকার লাভ-লোকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, দোষ- ত্রুটি থেকে তিনি মুক্ত বা পবিত্র। বিশ্বজগৎ সৃষ্টিতে তাঁর কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয় নি। সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও তাঁর কোনো সাহায্যকারীর দরকার নেই। বড় বড় সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত তাঁর এক হুকুমেই তৈরি হয়ে যায়। জটিল জটিল সৃষ্টিও তাঁর 'হও' বলার সাথে সাথে অস্তিত্ব লাভ করে । সুতরাং তিনি সাহায্যকারী ব্যতীতই মহান স্রষ্টা।

তাঁর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। এমনকি ইবাদত-বন্দেগি ও প্রশংসারও তিনি মুখাপেক্ষী নন । মানুষের নিজের কল্যাণের জন্যই ইবাদত-বন্দেগি করা প্রয়োজন । তিনি খাদ্য-পানীয়, নিদ্রা, বিশ্রাম ইত্যাদির উর্ধ্বে । এক কথায় তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও অমুখাপেক্ষী একমাত্র সত্তা।

আমরা আল্লাহ তায়ালার এ গুণ উপলব্ধি করব। নিজে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করব। পরমুখাপেক্ষিতা বর্জন করব । আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট সাহায্য চাইব না।

 

আল্লাহু রাউফুন

রাউফুন শব্দের অর্থ অতিশয় দয়াবান, পরম দয়ালু, অতি স্নেহশীল । আল্লাহু রাউফুন অর্থ- আল্লাহ অতি দয়াবান, অত্যন্ত স্নেহশীল । আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার শেষ নেই । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪৩)

আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার শেষ নেই । তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন । এরপর তিনি দয়া ও স্নেহের মাধ্যমে আমাদের প্রতিপালন করেন । তিনি মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে মায়া- ভালোবাসা সঞ্চার করে দেন । তাঁরা আমাদের সেবা দিয়ে বড় করেন । আমরা নাফরমানি করলেও তিনি দুনিয়াতে আমাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না । বরং করুণাবশত আমাদের সুযোগ দেন। আমরা তাওবা করলে তিনি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করেন। আমাদের রহমত ও বরকত দান করেন । দুনিয়া ও আখিরাতের সব কল্যাণই তাঁর দান । তিনি করুণা ও দয়ার আধার । 

আমরাও আল্লাহ তায়ালার এ গুণের চর্চা করব । পরস্পরের প্রতি আমরা দয়াশীল হব । কাউকে আঘাত করব না। বরং স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে আপন করে নেব।

 

আল্লাহু হাসিবুন 

হাসিবুন অর্থ হিসাব গ্রহণকারী । আল্লাহু হাসিবুন অর্থ আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী ।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৮৬)

আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন মানুষের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। হাশরের ময়দানে তিনিই হবেন একমাত্র বিচারক। আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

অর্থ : “তিনি (আল্লাহ) বিচার দিনের মালিক ।” (সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত ৩)

সেদিন তিনি সব মানুষের হাতে আমলনামা প্রদান করবেন। আমলনামায় প্রত্যেকের সব কাজের হিসাব লেখা থাকবে। ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গোপনে-প্রকাশ্যে কৃত সবধরনের কাজেরই সেদিন হিসাব নেওয়া হবে । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ : “যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তারও হিসাব নেবেন ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৪)

সবাইকেই সেদিন আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। পাপ পুণ্যের হিসাব না দিয়ে সেদিন কেউই রেহাই পাবে না। আল্লাহ তায়ালা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবারই হিসাব নেবেন। এজন্যই তিনি হাসিব বা সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী।

আমরা আল্লাহ তায়ালার এ গুণটির তাৎপর্য বুঝব। তারপর নিজেই নিজ আমলের হিসাব রাখব। প্রতিদিন রাতে ঐ দিনের পাপ-পুণ্যের হিসাব করব। অতঃপর পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং ভবিষ্যতে পাপ আর না করতে চেষ্টা করব।

 

আল্লাহু মুহাইমিনুন 

মুহাইমিনুন শব্দের অর্থ নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, আশ্রয়দাতা। আল্লাহু মুহাইমিনুন অর্থ আল্লাহ আশ্রয়দাতা । আল্লাহ তায়ালা হলেন প্রকৃত রক্ষাকর্তা । তিনিই একমাত্র এবং সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। আল্লাহ তায়ালাই আমাদের রক্ষক । তিনি আমাদের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তিনিই হেফাজত করেন। হিংসুক, জাদুকর, ষড়যন্ত্রকারী, সকলের অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী একমাত্র তিনিই । তাঁর সুরক্ষাই প্রকৃত সুরক্ষা। কেউ তাঁর সুরক্ষা ভেদ করতে পারে না। তিনি যাকে রক্ষা করেন কেউ তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। সবসময় সকল বিপদে তাঁরই আশ্রয় চাইতে হবে। আল কুরআন ও হাদিসের বহুস্থানে আমাদের এ শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবি (স.) তাঁর নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করতে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করব। তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। আমরা বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করব, আশ্রয় দেব। ফলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর খুশি হবেন।

কাজ : শিক্ষার্থীরা মহান আল্লাহর ১৫টি গুণবাচক নাম অর্থসহ লিখে একটি তালিকা প্রস্তুত করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।
Content added || updated By